ওয়ারেন, ৩১ অক্টোবর : আজ মঙ্গলবার হ্যালোইন। ‘হ্যালোইন’ শব্দের পূর্ণ রূপ ‘হ্যালো’জ ইভিনিং’ বা ‘হ্যালোড ইভিনিং’, যা অর্থ ‘পবিত্র সন্ধ্যা’। শব্দটি এসেছে স্কটিশ ‘অল হ্যালো’জ ইভ’ থেকে। মধ্যযুগে শুরু হওয়া এ উৎসব এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পালিত হয়। তবে পশ্চিমা বিশ্বে জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হয় হ্যালোইন। প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর পালন করা হয় হ্যালোইন। এই বছর এই দিনটি পড়েছে আজ বৃহস্পতিবার।
এই ভূতুরে উৎসবের ইতিহাস দুই হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন। এই বিশেষ দিনটি বেশিরভাগ পশ্চিমী খ্রিস্টান এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা হ্যালোইন উৎসব হিসেবে উদযাপন করেন। ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্যান্য উন্নত বিশ্বে অক্টোবর মাস শুরু হলেই বিভিন্ন দোকানে হ্যালোইন উৎসবের জন্য একটা সাজসাজ ভাব শুরু হয়ে যায়। মিষ্টিকুমড়া থেকে শুরু করে কালো রঙের পোশাক, মাকড়সার জাল, ভূত সাজার মুখোশ ইত্যাদি আনুষঙ্গিক আরও হরেক রকমের জিনিসপত্র বিক্রির ধুম পড়ে যায়।
আইরিশ ও স্কটিশ অভিবাসীরা ১৯শ শতকে এই ঐতিহ্য উত্তর আমেরিকাতে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলিও হ্যালোইন উদযাপন করা শুরু করে। বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের অনেকগুলি দেশে হ্যালোইন পালিত হয়, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, পুয়ের্তো রিকো এবং যুক্তরাজ্য। এছাড়া এশিয়ার জাপানে এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও হ্যালোইন পালিত হয়।
এই একটি রাত উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি চলে বহুদিন আগে থেকে। এই বিশেষ দিনে সকলে বিভিন্ন রকমের ভুতুড়ে পোশাকে সাজেন। সন্ধ্যায় বাড়ির আঙ্গিনায় ভৌতিক আবহ আনার জন্য, মাকড়সার কৃত্রিম জাল, মিষ্টি কুমড়োর মধ্যে বিভিন্ন ভৌতিক ডিজাইন করে এর মধ্যে আলো রাখা হয়। বাড়ির লাইট নিভিয়ে দিয়ে একটি ভৌতিক পরিবেশ আনা হয়। এই ভৌতিক পরিবেশে শিশুরা সন্ধ্যায় ব্যাগ নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখায় এবং বাড়ির মালিক শিশুদেরকে চকলেট দিয়ে বিদায় করেন। আর সেই চকলেট নেওয়ার জন্য ছোট ছেলেমেয়েরা সবাই ব্যাগ নিয়ে বের হয়।
হ্যালোইন উৎসব এখন শুধু ইউরোপ কিংবা আমেরিকার মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। এটি একটি সর্বজনীন উৎসব হিসেবে পরিণতি পেয়েছে। এই উৎসব পালন করা হয় বাংলাদেশেও। তবে হাল আমলের বাংলায় সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা চতুর্দশী নামক এক বিশেষ উৎসবের আয়োজন করে থাকেন যাকে বাংলার হ্যালোইন বললেও ভুল হবে না।
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে হয় শ্যামা পুজো বা কালী পুজো। এর ঠিক আগের রাতে অনেক বাঙালিরা পালন করেন ভূত চতুর্দশী। পূরাণ মতে ভূত চতুর্দশীর রাতে শিবভক্ত রাজা বলি, মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে। সঙ্গে আসেন তাঁর অনুচর ভূতেরা। চতুর্দশী তিথির ভরা অমাবস্যায় চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে। সেই ঘন অন্ধকারে যাতে বলি রাজার অনুচরেরা বাড়িতে ঢুকে না পড়েন, তার ব্যবস্থাই করা হত প্রাচীন কালে। ভূত চতুর্দশীতে বাড়িতে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানো হয়। আর হ্যালোইনেও বাড়ির চারপাশে টাঙানো হয় বিচিত্র লন্ঠন, যার অধিকাংশই কুমড়ো কেটে তৈরি। আজ ৩১ অক্টোবর পালিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভূত চতুর্দশী।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan